আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অমান্য করে তিন ঘন্টার পরীক্ষা বাড়ি বসে চব্বিশ ঘন্টায় দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা ! একটি বিদ্যালয়ে স্ব-গৃহ মুল্যায়ন পরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রকল্প গ্রহনের অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। অভিনব এই কৌশলী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলার রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। মাহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমনের মধ্যে পরীক্ষা নেয়াকে কেন্দ্র করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। এটা ¯্রফে টাকা কামানোর ধান্ধা বলেছেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী নির্দেশে বন্ধ থাকলেও সরকারী নির্দেশ অমান্য করে কোন রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই করোনা ভাইরাস সংক্রমনের চরম ঝুকির মধ্যে উপজেলার রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘স্ব-গৃহ মূল্যায়ন” পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগৈলঝাড়ায় সরকারী ঘোষণায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত সকল বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারী নিষেধ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় “স্ব-গৃহ মুল্যায়ন পরীক্ষা”র নামে অভিনব একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, সকাল নয়টায় তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের ক্লাশের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ওই প্রশ্নের আলোকে বাড়ি বসে তারা খাতায় লিখে পরদিন একই সময়ে বিদ্যালয়ে জমা দিয়ে আবার নতুন পরীক্ষার জন্য নতুন প্রশ্ন গ্রহন করতে হচ্ছে। সে হিসেবে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সচেতন মহল বলছেন জীবনে তারা এই পরীক্ষার নামও শোনেনি, চোখেও দেখেননি। তারা বলছেন এটা পরীক্ষা নয়; শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি অভিনব কৌশল মাত্র। কারণ, সবাই বাড়ি বসে নিজের মতো করে বই বা গাইড দেখে দেখে খাতায় লিখে আনছে শিক্ষার্থীরা। এই ধরনের পরীক্ষায় কি মেধা মূল্যায়ন হবে এমন প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, এটা বরং তাদের ছেলে মেয়েদের নকল করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সূত্র মতে, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তৈরী করা প্রশ্নপত্রে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে অভিনব এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্ব-গৃহ মুল্যায়ন পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে খাতা জমা দিয়ে যাচ্ছে। বুধবার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেনীর বাংলা এবং নবম ও দশম শ্রেনীর বিজ্ঞান ও পদার্থ বিষয়ের প্রশ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি যেতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা ২৪ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে বৃহম্পতিবার সকালে ওই পরীক্ষার খাতা বিদ্যালয়ে জমা দেবে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনীতে ৬২জন, সপ্তম শ্রেনীতে ৬০জন, অষ্টম শ্রেনীতে ৪৫জন, নবম শ্রেনীতে ৬৫জন ও দশম শ্রেনীতে ৫৪জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে। এই পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির জন্য ২শ টাকা, অষ্টম শ্রেণির জন্য ২শ ৫০ টাকা, নবম এবং দশম শেণির জন্য ৩শ টাকা প্রদান করে প্রবেশপত্র নিতে হয়েছে তাদের। পরীক্ষার জন্য ফি নিলেও তাদের দেয়া হচ্ছে না পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য কোন খাতা। ফি দেয়া সত্বেও নিজ উদ্যোগ ও খরচে পরীক্ষার খাতা বানিয়ে তাতেই বাধ্য হয়ে লিখে আনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, বর্তমানে নতুন করে ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে ২শ ৫০টাকা করে ভর্তি ফি। এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ের অভিনব বানিজ্যে হতবাক। একইভাবে এর আগে উপজেলার রাংতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও অভিনব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হরবিলাস বাড়ৈ জানান, উপজেলা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের এক সভায় (তিনি উপস্থিত ছিলেন) শিক্ষা অফিসার বলেছিলেন যে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মুল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল ১০অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে। শিক্ষা অফিসারের এমন নির্দেশের পরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি তিনটি সভা করে পরীক্ষার নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ি শিক্ষকদের তৈরী করা প্রশ্নে বর্তমানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জল কুমার মন্ডল জানান, শিক্ষার্থীদের ভালর জন্য এই মুল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। তিনি অভিনব পরীক্ষায় ফি নেয়ার ব্যাপারে বলেন, বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল ও কর্মচারীর বেতন পরিশোধের জন্য টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহাদেব চন্দ্র বসু জানান, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ বলেন, উপজেলা শিক্ষক সমিতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যপারে কোন সিদ্বান্ত গ্রহন করা হয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সভায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষকেদের মধ্যে দ্বিমত থাকলে উর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্বান্ত বাতিল করা হয়েছে। এরপরেও কোন বিদ্যালয় পরীক্ষা নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিনব পরীক্ষা গ্রহনের বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, সরকারের পরীক্ষা এমন কোন নির্দেশনা নেই। ১৫মার্চ থেকে চলতি বছর সকল বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি ভার্চুয়াল পদ্ধুতিতে ক্লাশ নেয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে কোন রকম পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত সরকার তো দেয়ই নি বরং জেএসসি, জেডিসি’র শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব স্কুলের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করে পরবর্তি ক্লাশে উত্তীর্ন করার কথা বলা হয়েছে। এই নিয়মের বাইরে কারো যাবার কোন সুযোগ নেই। অভিণব পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ¯্রফে টাকা কামানোর ধান্ধা। আর কিছুই নয়। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
Leave a Reply